মুরাদনগরে রাত হলেই জেগে উঠে মাটিখেকোদের চক্র দৈনিক ভোরের কলাম দৈনিক ভোরের কলাম প্রকাশিত: ১১:১৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫ সফিকুল ইসলাম, মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি: কুমিল্লার মুরাদনগরে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেই শুরু হয়ে যায় গোমতি নদীর দুই পাড়ের মাটি খেকোদের মাটি কাটার মহোৎসব। প্রায় ২০টি স্থানে সারারাত ধরে চলে ভেকু দিয়ে কৃষিজমি ও গোমতী নদী থেকে মাটিকাটা। আর সেই মাটি কয়েকশ ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাক দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন ইটভাটায়। গোমতী নদীর ভাঙ্গন রুখতে দুই পাড়ে বাঁধ দেওয়া হলেও প্রতিনিয়ত মাটি কাটার ফলে নদীর দুই পাড়ের বাঁধ এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। এদিকে কৃষি জমি ও নদী থেকে মাটিকাটা বন্ধে দিনের বেলা বেশ তৎপর দেখা যায় প্রশাসনকে। তবে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছাত্র ছায়ায় চলা রাতের বেলায় মাটিকাটা বন্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। বরং উল্টো প্রশাসনের বিরুদ্ধেই মাটিখেকোদের সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, গোমতী নদীর মুরাদনগর সদর ইউনিয়নের আলীরচর, সোনাপুর, ঘোড়াশাল, দিলালপুর, জাহাপুর ইউনিয়নের সাতমোড়া, ছয়ফুল্লাকান্দি, গাংগাটিয়া, জাহাপুর, পুনিয়াটন, ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নের বোরারচর, সুবিলারচর, দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল, ধামঘর ইউনিয়নের ধামঘর, নীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের শিবানীপুর, দক্ষিণ ত্রিশ, নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের গুঞ্জুর এলাকাসহ উপজেলার অন্তত ২০টি পয়েন্টে অবৈধভাবে মাটিকাটা চলছে। মাটিবাহী ট্রাকগুলো উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের সামনে দিয়েই বাধাহীনভাবে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। সাতমোড়া গ্রামের হালিম সরকার বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ যাবত আমাদের গ্রামের কেউই রাতে ঘুমাতে পারি না। প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে শুরু হয় গ্রামের ভেতর দিয়ে মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচল, শেষ হয় ভোর ৪টায়। ট্রাক্টরের শব্দে ঘুমিয়ে থাকা বাচ্চারা ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। এদেরকে বাঁধা দিতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা উল্টো তাদের পক্ষ নিয়ে আমাদেরকে মারধরের হুমকি দেয়। এই মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচলের কারনে গ্রামের ভেতরের নতুন পাকা সড়কগুলোর এখন বেহাল অবস্থা। জাহাপুর গ্রামের পাভেল খান বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সম্প্রতি কিছুদিন মাটিকাটা বন্ধ ছিল। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আবারও শুরু হয়েছে। কৌশল পাল্টিয়ে এখন দিনের বদলে রাতে কাটা হচ্ছেমাটি। শুশুন্ডা গ্রাম থেকে জাহাপুর পর্যন্ত গোমতী নদীর এই ৩ কিলোমিটার এরিয়ার মধ্যে ১০-১২টি জায়গায় রাতের বেলা মাটিকাটা হয়। কিছুদিন দেখি প্রশাসনের লোকজন নামমাত্র অভিযান চালায়। আবার কিছুদিন পর দেখি যেই লাউ, সেই কদু। আর পুলিশ তো এসব দেখেও না দেখার ভান ধরে থাকে। প্রশাসনের লোকজনের সহযোগিতা ছাড়া এভাবে নদীর জায়গা থেকে মাটিকাটা অসম্ভব। এভাবে চলতে থাকলে আগামী বর্ষা মৌসুমে গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মাটি ব্যবসায়ী জানান, তারা সব ম্যানেজ করে বৈধ উপায়ে এসব মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন ইটভাটায়। যেখান থেকে মাটিকাটা হচ্ছে সেগুলো সব কৃষি জমি, গোমতী নদীর জায়গা না। রাতের আঁধারে মাটি কাটার বিষয়ে তারা বলেন, রাস্তায় যানজট এড়াতে প্রশাসন ও স্থানীয়দের পরামর্শেই রাতের বেলা মাটিকাটা হয়। তারা আরো জানান, প্রশাসনের অভিযানের হাত থেকে বাঁচতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে প্রশাসনকে জমির প্রকারভেদে প্রজেক্ট প্রতি মাটিকাটার ক্ষেত্রে দিতে হয় ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকা এবং নামধারী সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে আরো দিতে হয় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান টাকার বিনিময়ে মাটিকাটায় সহযোগিতার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি জানতে পেরেছি গোমতী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে রাতের বেলা মাটিকাটা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাটিকাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। SHARES প্রচ্ছদ বিষয়: