তারুণ্য মেলার পিঠা উৎসবে মুখরিত ডা. ফিরোজা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ আঙিনা;উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ১১:০৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩০, ২০২৫

আকিবুল ইসলাম হারেছ:
বাঙালি সংস্কৃতির সাথে আষ্টেপৃষ্টে মিশে আছে পিঠাপুলির নাম। তবে আধুনিক পিজ্জা বার্গারের ছোঁয়ায় পিঠাকে ভুলেই যেতে বসেছিলো বাঙালি। কিন্তু ধীরে ধীরে বাঙালির জীবনে ফিরে আসছে ঐতিহ্যবাহী পিঠা। তারুণ্যের উৎসব উদযাপন উপলক্ষে তারুণ্য মেলা-২০২৫ ও বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে বৃহস্পতিবার(৩০ জানুয়ারি) কুমিল্লার চান্দিনা সদরে অবস্থিত ডা. ফিরোজা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় পিঠা উৎসব। ১৮টি স্টলের পিঠা পুলির ঘ্রাণে মুখোরিত হয়ে ওঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।

দেশি বাহারি পিঠা প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করানো হয়। পিঠা উৎসব উপলক্ষে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবকদের আগমনে স্কুল প্রাঙ্গণ মিলন মেলায় পরিণত হয়।উৎসবে ছিলো হরেক রকমের পিঠার আয়োজন। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানান ধরনের মুখরোচক পিঠা প্রদর্শনী করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা এবং ঐতিহ্য ধরা রাখাই ছিল এর প্রধান উদ্দেশ্য।

দেখা যায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্টলে নানা আইটেমের পিঠা নিয়ে উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের তৈরি করা এসব পিঠা দেখতে বিভিন্ন স্টলে ভিড় করেছিল অভিভাবকেরা।স্টলে নানা রকম পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে রাখা আছে। এর মধ্যে কতিপয় পিঠা একেবারেই নতুন আবার কিছু অতিপরিচিত। প্রতিটা পিঠার ওপরে লেখা আছে পরিচিতি নাম। এসব পিঠার নামও বেশ বাহারি।

উৎসবে ছিলো— ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের রসের পিঠা, ক্ষীর কুলি,গোলাপ ফুল পিঠা, রস পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান পিঠা, নারকেলের সেদ্ধ পুলি, তেজপাতা পিঠা, তেলের পিঠা, তেলপোয়া পিঠা, চাঁদ পাকান পিঠা, ছিট পিঠা, দুধ চিতই, ফুল পিঠা, সেমাই পিঠা, নকশি পিঠা, নারকেল পিঠা, নারকেলের ভাজা পুলি, দুধরাজ, ফুলঝুরি পিঠাসহ আরও বাহারি সব নামের পিঠা।

শিশু শিক্ষার্থীরা বাবা-মায়ের হাত ধরে ঘুরে দেখছেন স্টল। জানছেন নতুন নতুন পিঠা সম্পর্কে। পুরো স্কুল মাঠ রূপ নিয়েছে অনিন্দ্য মিলনমেলায়।জানা-অজানা পিঠার সম্পর্কে জানতে পেরে এবং স্বাদ গ্রহণ করতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরা।

অভিভাবকরা জানান, পিঠা উৎসব এখন শহরের আনুষ্ঠানিকতায় পরিনত হয়েছে। এই উৎসবের কারণে গ্রামের সেই পিঠাপুলির ঘ্রাণ নিতে পারছি, স্বাদ নিতে পারছি। এখানে এসে বেশ ভালো লাগছে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, বাহারি রকমের এতো পিঠা একসঙ্গে এর আগে কখনো দেখা হয়নি।স্কুলের পিঠা উৎসবে সহপাঠীদের সঙ্গে পিঠা খাওয়া হয়। অনেক সিনিয়র ও জুনিয়র আপুরা পিঠা বিক্রি করছে। এতে খুব আনন্দ হচ্ছে।

বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা জানান, পিঠা উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাঙালির নানা রকমের পিঠার সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি ধরে রাখতে এই স্কুলে এরকম আয়োজন প্রতি বছর হয়।এছাড়া পিঠা উৎসবকে উপলক্ষ করে অনেকদিন পর সাবেক শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসে। বেশ ভালোই লাগে।

চান্দিনা ডা. ফিরোজা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাদেকুর রহমান কিরণ জানান, পিঠা-পুলি হলো আমাদের লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই প্রকাশ। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যকে স্মরণ করতেই প্রতি বছর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে এ উৎসবের আয়োজন করে থাকে।বেশ ভালো লাগছে।

পিঠা উৎসবে চান্দিনা ডা. ফিরোজা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাদেকুর রহমান কিরণ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি নাজিয়া হোসেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ কাউছার হোসেনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ইকবাল হাসান।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াছিন আরাফাত হিমু,যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম অভি, ছাত্র নেতা ইশতিয়াক আহমেদ ইফতি,ছাত্র প্রতিনিধি গাজী আলাউদ্দিন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ছাত্র প্রতিনিধি রাব্বি,রিফাত,ফয়সাল, ফারহানাসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও গন্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ।